তিন বিশ্ব মডেল: প্রথম বিশ্ব, দ্বিতীয় বিশ্ব, তৃতীয় বিশ্ব ( + চতুর্থ বিশ্ব)

তিন বিশ্ব মডেল: প্রথম বিশ্ব, দ্বিতীয় বিশ্ব, তৃতীয় বিশ্ব ( + চতুর্থ বিশ্ব)
________________________
:
প্রকৃতপক্ষে প্রথম বিশ্ব, দ্বিতীয় বিশ্ব এবং তৃতীয় বিশ্ব এই টার্মগুলি ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বকে তিনটি ক্যাটেগরিতে ভাগ করার জন্য। এগুলো আকস্মিকভাবে উদ্ভূত হয় নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে 'শীতল যুদ্ধ' চলাকালীন সময়ে বিশ্বের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতার প্রতিযোগিতার ফসল হিসেবে এইসব নামের আবির্ভাব। তারা দুইটি ক্যাম্প বা ব্লক সৃষ্টি করেছিল নিজেদের সুবিধার জন্য। এই ব্লকগুলো গঠিত হয়েছিল প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বের ধারণার উপর ভিত্তি করে।[১]

.
স্নায়ুযদ্ধ বা শীতল যুদ্ধের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে যথাক্রমে ন্যাটো ও ওয়ারশ প্যাক্ট নামে দুইটি ব্লক গঠিত হয়েছিল । এই দুই ব্লককে অন্যভাবেও ডাকা হত। যাদের একটিকে বলা হত ন্যাটো বা পশ্চিমা ব্লক ও অন্যটিকে বলা হত ওয়ারশ প্যাক্ট বা পূর্ব ব্লক। অবস্থাগত দিক থেকে এগুলো ছিল দুইটি ভিন্ন ধরণের ব্লক এবং বলতে গেলে এগুলো ছিল দুইটি পৃথিবী, যদিও তাদেরকে এক নম্বর ও দুই নম্বর হিসেবে গণনা করা হয় নি। [২] উইনস্টন চার্চিল'র বিখ্যাত লৌহ পর্দা বা আয়রন কার্টন বক্তৃতা থেকে শীতল যুদ্ধের সূচনা বিবেচিত হয়।[৩] তাঁর বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, পশ্চিম ও পূর্বের বিভক্তি একটি দৃঢ বাস্তবতা যা তিনি 'আয়রন কার্টন বা লৌহ পর্দা' বলে অভিহিত করেছেন। [৩]
.
১৯৫২ সালে ফ্রেঞ্চ জনসংখ্যাতত্ত্ববিদ আলফ্রেড সোভে বিপ্লব-পূর্ব ফ্রান্সের তিনটি রাজ্যের অবস্থার প্রেক্ষিতে তৃতীয় বিশ্ব নামটি উল্লেখ করেছিলেন।[৪] প্রথম দুই এস্টেট হচ্ছে অভিজাত ও যাজকগোষ্ঠীর এবং বাকি সব হচ্ছে তৃতীয় এস্টেটের অন্তর্ভুক্ত।[৪] তিনি পুঁজিবাদী বিশ্বকে (প্রথম বিশ্ব) অভিজাত ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে (দ্বিতীয় বিশ্ব) তুলনা করেছেন যাজক সম্প্রদায়দের সাথে; আর বাকিদের তৃতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সোভে তৃতীয় বিশ্বকে দেখিয়েছেন যে সব দেশ শীতল যুদ্ধে জড়ায় নি বা পূর্ব-পশ্চিম দ্বন্দ্বে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নি।[৪][৫] With the coining of the term Third World directly, the first two groups came to be known as the "First World" and "Second World" respectively. Here the three-world system emerged.[★★]
.
চীফ জর্জ ম্যানুয়েল বিশ্বাস করতেন 'তিন বিশ্ব মডেল' সেকেলে হয়ে যাবে। ১৯৭৪ সালে তাঁর বই The Fourth World: An Indian Reality তে তিনি চতুর্থ বিশ্বের ধারণা দিয়েছেন। সেখানে তিনি চতুর্থ বিশ্ব বলতে সেই আদিবাসী জনগণের জাতিগুলোকে--সাংস্কৃতিক বা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী-- বুঝিয়েছেন যাদের সাধারণ বাস্তবতায় কোনো রাষ্ট্র নেই। বরং তারা একটি দেশের ভিতরে বা বহুদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করে। উদাহরণস্বরূপ, রেড ইন্ডিয়ান বা আদিবাসী আমেরিকানরা উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে বাস করে।
:
:
শীতল যুদ্ধ পরবর্তী
.
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পূর্ব ব্লকের বিলুপ্তি ঘটে; সাথে সাথে দ্বিতীয় বিশ্ব নামটিও কার্যকারীতা হারায়।[৬] বর্তমানে প্রথম বিশ্ব ও তৃতীয় বিশ্বের সংজ্ঞার কিছুটা পরিবর্তন ঘটলেও এগুলোর মূল ধারণার কোনো এদিক-ওদিক হয় নি।
:
:
সংজ্ঞার পরিবর্তন
:
যেহেতু শীতল যুদ্ধের পরে 'প্রথম বিশ্ব' শব্দটা আর তেমন একটা কার্যকরীভাবে প্রযোজ্য হয় না। ফলে প্রথম বিশ্বের অনেক প্রকার সংজ্ঞা নিরূপিত হয়েছে, যদিও সবগুলোই একই ধারণা পোষণ করে। জন ডি দানিয়েলস, একাডেমি অব ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রথম বিশ্বকে বলেছেন, 'উচ্চ-আয়ের শিল্পোন্নত দেশসমূহ'। স্কলার ও প্রফেসর জর্জ জে ব্রায়জাক প্রথম বিশ্ব বলতে দেখিয়েছেন, 'আধুনিক, শিল্পোন্নত উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের পুঁজিবাদী দেশসমূহ'। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ইনফরমেশন এজেন্সি ও মেরিডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের সাবেক পরিচালক এল রবার্ট কোল এর মতে, 'প্রথম বিশ্ব' শব্দবন্ধটি 'পরিপূর্ণভাবে উন্নত' শব্দবন্ধের সমার্থক।
:
:
অন্যান্য সূচকগুলো
.
'প্রথম বিশ্ব' এই টার্মের সংজ্ঞার ভিন্নতার এবং দ্যার্থবোধকতার কারণে বর্তমানে এটি ভিন্ন আঙ্গিকে রূপায়িত হচ্ছে। ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ দেশগুলোর সম্পদের প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি করে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ বিশ্বের অবতারণা করেছিল। এটি আরও বিভিন্ন দিক থেকে দেখা যায়। কেউ কেউ এটিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন সামাজিক-রাজনৈতিক ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনায় রেখে জিএনপি'র (সামষ্টিক জাতীয় আয়) উপর ভিত্তি করে যা মার্কিন ডলারে হিসাব করা হয়। প্রথম বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ভারী শিল্পে উন্নত, গণতান্ত্রীক দেশসমূহ। দ্বিতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আধুনিক, সম্পদশালী, শিল্পোন্নত দেশসমূহ; কিন্তু যারা সমাজতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বাকি বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই তৃতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত; আর চতুর্থ বিশ্বের দেশ বলতে তাদেরকেই বুঝায় যাদের মাথাপিছু আয় বার্ষিক ১০০ ডলারের নিচে।
.
(→ মূল উৎস: উইকিপিডিয়া)
.
:
উদ্ধৃতিবন্ধ[১] Gaddis, John (১৯৯৮)। We Now Know: Rethinking Cold War History। Oxford: Oxford University Press। পৃ: 1–2। আইএসবিএন 0-19-878071-0।
.
উদ্ধৃতিবন্ধ[২] Melkote, Srinivas R.; Steeves, H. Leslie (২০০১)। Communication for development in the Third World: theory and practice for empowerment। Sage Publications। পৃ: ২১। আইএসবিএন 0-7619-9476-9।
.
উদ্ধৃতিবন্ধ[৩] "Winston Churchill "Iron Curtain""। The History Place। সংগৃহীত নভেম্বর ২০০৯।
.
উদ্ধৃতিবন্ধ[৪] "Three World Model"। University of Wisconsin Eau Claire। সংগৃহীত সেপ্টেম্বর ২০০৯।
.
উদ্ধৃতিবন্ধ[৫] Leonard, Thomas M. (২০০৬)। "Third World"। Encyclopedia of the Developing World 3। Taylor & Francis। পৃ: 3। আইএসবিএন 0-87073-943-3। সংগৃহীত নভেম্বর ২০০৯।
.
উদ্ধৃতিবন্ধ[★★] Leonard, Thomas M. (২০০৬)। "Third World"। Encyclopedia of the Developing World 3। Taylor & Francis। পৃ: 1542–3। আইএসবিএন 0-87073-943-3। সংগৃহীত নভেম্বর ২০০৯।
.
উদ্ধৃতিবন্ধ[৬] "Fall of the Soviet Union"। The Cold War Museum। ২০০৮। সংগৃহীত নভেম্বর ২০০৯।