কন-শাস-নেস দ্বিতীয় পর্ব

কন-শাস-নেস
দ্বিতীয় পর্ব
"I am, because I think."
১।
চার পাঁচ বছর আগের কথা। তখন প্রথম গুগল কার্ডবোর্ড বাজারে আসলো। আশেপাশে ফ্রেন্ডরা শখ করে কার্ডবোর্ড কিনে ভারচুয়াল রিয়েলিটির এক্সপেরিয়েন্স নিচ্ছে, আমিও একটা কিনলাম। মোটামুটি জিনিস, বেশিক্ষণ VR গেম খেললে চোখ ব্যাথা করে। এই কার্ডবোর্ডের চেয়ে অনেক অনেক ভালো VR এক্সপেরিয়েন্স কিন্তু সম্ভব। চোখে কার্ডবোর্ড না লাগিয়ে সরাসরি ব্রেইনে ভিসুয়্যাল সিগন্যাল দেওয়া যায়। তখন দেখার জন্য আপনার চোখ দরকার হবে না। সরাসরি ব্রেইনে অডিটরি সিগন্যাল দেওয়া যায়। তখন শোনার জন্য কান দরকার হবে না। টাচ, টেম্পারেচার, প্রেশার, আর যত সেন্সর আছে আপনার, সব ডিরেক্টলি ব্রেইনে ইনপুট দেওয়া যায়।
এই অবস্থায়, আপনার ব্রেইনটাকে খুলে নিয়ে যদি একটা জারের মধ্যে রাখা হয়, আর বাইরে থেকে যদি সব অনুভূতি সরাসরি ব্রেইনে ইনপুট দেওয়া হয়, আপনি দেখবেন আপনি চলছেন, ফিরছেন, আপনার একটা শরীর আছে, আশেপাশে অনেক মানুষ আছে, আপনার চারপারে একটা আকাশ আছে, আকাশ ভরা নক্ষত্র আছে, পায়ের নিচে মাটি আছে।
আপনি কি শিওর আপনি এই অবস্থায় নাই?
এবার ধরেন, আপনার চারপাশের জগতটা মিথ্যা, চারপাশের মানুষগুলো মিথ্যা। পুরোটা একটা illusion. আপনি কি শিওর আপনার একটা ব্রেইন আসলেই আছে? আপনি কি শিওর আপনি নিজে illusion না?
ফরাসি ফিলসফার রেনে ডি কার্টিস ছিলেন মাইন্ড-বডি ডুয়ালিটি মতবাদের প্রবক্তাদের একজন। মন বা আত্মা ব্রেইনের অংশ না, আলাদা অতিপ্রাকৃত কিছু, এই ছিল তার মতবাদের সারাংশ। আজকালকার নিউরোসায়েন্টিস্টরা এই মতবাদ মানেন না, তাদের কাছে এর চেয়ে ভাল ব্যাখ্যা আছে।
এই ডি কার্টিসের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কিভাবে শিওর হবেন আপনার অস্তিত্বটা সত্যি? তার জবাব ছিল, "I am, because I think." অন্য সবকিছু মিথ্যা হয়ে যাক, আমি যে কনশাস, আমি যে চিন্তা করছি, এইটাই আমার অস্তিত্বের প্রমাণ।
২ ।
একটা সময় লাইফ জিনিষটাকে অতিপ্রাকৃত মনে হত, এই জিনিস ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা সম্ভব না মনে করা হত। আসতে আসতে দিন পাল্টাচ্ছে। DNA, লিপিড, প্রোটিন সব আলাদাভাবে ল্যাবে তৈরি করা যায়। কিছুদিন আগে পড়লাম, একটা ব্যাকটেরিয়ার আদি নিউক্লিয়াসটাকে বের করে এনে ল্যাবে তৈরি আরেকটা নিউক্লিয়াস বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিউক্লিয়াস বের করার পর ব্যাকটেরিয়ার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়, নতুন নিউক্লিয়াস পেয়ে সে আবার চলাফেরা শুরু করে। আমরা কি লাইফ তৈরি করতে পেরেছি?
এই ব্যাকটেরিয়াটা খায় দায় ঘুরে বেড়ায় ছোট থেকে বড়ো হয়, বাচ্চাও দেয়। অ্যাসিডে চুবিয়ে রাখলে তার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়, সে মারা যায়। এ যে জীবন্ত, সন্দেহ নেই। কিন্তু সে কি আসলে কিছু experience করে? তার ফ্ল্যাজেলায় শিকার ধরা পরলে সে কি সামান্য হলেও খুশি হয়? তার চক্ষুবিন্দুতে আলো পড়লে সে কি আসলে কিছু দেখে?
৩।
আপনি চোখ মেলে তাকালেন। বিভিন্ন লেংথের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ আপনার চোখে ঢুকল। আপনার রেটিনায় অনেকগুলো সেন্সর আছে, তারপর অপটিক নার্ভে অনেকগুলো নিউরন আছে। এগুলো ইনফরমেশন বয়ে নিয়ে ব্রেইনে আসে।
খেয়াল করেন: লাল বলে কিচ্ছু নাই। নীল বলে কিচ্ছু নাই। কালো নাই, সাদা নাই। সব ডিফারেন্ট ওয়েভ লেংথের আলো। চোখ থেকে আনা ইনফরমেশন প্রসেস করে আপনার ব্রেইন আপনাকে এইসব দেখাচ্ছে।
ওয়েট আ মিনিট। আপনাকে দেখাচ্ছে মানে? আপনি কে? ছবিটা যখন চোখে ছিল তখন কি আসলে কিছু দেখেছেন? না। চোখে কি নিউরন ছিল না? ব্রেইনে আসার পর ছবিটা কই যায়? কেমিক্যাল সিগন্যাল হয়ে নিউরনে নিউরনে ছড়িয়ে পরে তাই তো? এই ছড়িয়ে পড়ার ঠিক কোন পয়েন্টে আপনার দেখার অনুভূতি হয়? কেন, এইভাবে ছড়িয়ে পড়লে আপনার দেখার অনুভূতি হবে? লাল আসলে কি জিনিস? ব্রেইনে ছবি আসল, ব্রেইনে প্রসেস হোল, দেখল টা আসলে কে? কি আছে ওই ব্রেইনে যেটা আপনার চোখে নাই?
৪।
কনশাসনেসের ইন্টিগ্রেটেড ইনফরমেশন থিওরি অনুযায়ী:
ওই ব্যাকটেরিয়া কনশাস না। সে সত্যি সত্যি দেখতে পারে না ।
আপনার হাতের মোবাইল ফোনটা কনশাস না। তার ২ গিগাহার্জের প্রসেসরটা কোন কিছু এক্সপেরিএন্স করে না।
চ্যাটবট সোফিয়া কনশাস না। সে সত্যি সত্যি কিছু চিন্তা করে না।
আপনার ব্রেইনটা কনশাস।
(চলবে)
No photo description available.