আপনার ব্রেইনে ৩টা পার্ট। সেরেব্রাম, সেরেবেলাম আর ব্রেইন স্টেম। সেরেব্রামের উপরের লেয়ারটারটার নাম করটেক্স। ব্রেইনের ৮৬ বিলিওন নিউরনের মধ্যে ১৬ বিলিওন থাকে ওই করটেক্সের মধ্যে। আজকের গল্প, করটেক্সের গল্প।
.
.
.
.
শুরু করছি।
.
.
.
.
শুরু করছি।
১।
রাত গভীর। বাসার সবাই ঘুমিয়ে। কোন একটা ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখে আপনার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
তারপর শুরু হোল আরেকটা দুঃস্বপ্নের।
আপনি চিৎকার করার চেষ্টা করলেন, গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হোল না। আপনি উঠে বসার চেষ্টা করলেন, এক চুলও নড়তে পারলেন না। আপনি আর আপনার দুঃস্বপ্ন এক খাটে বন্দি।
এই অবস্থার নাম স্লিপ প্যারালাইসিস। বাংলায় বলে বোবায় ধরা। মাত্র ২ মিনিটের এই ঘটনা আতঙ্কের এক প্রতিশব্দ।
তারপর শুরু হোল আরেকটা দুঃস্বপ্নের।
আপনি চিৎকার করার চেষ্টা করলেন, গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হোল না। আপনি উঠে বসার চেষ্টা করলেন, এক চুলও নড়তে পারলেন না। আপনি আর আপনার দুঃস্বপ্ন এক খাটে বন্দি।
এই অবস্থার নাম স্লিপ প্যারালাইসিস। বাংলায় বলে বোবায় ধরা। মাত্র ২ মিনিটের এই ঘটনা আতঙ্কের এক প্রতিশব্দ।
আরেকটু প্রেস করি।
ধরেন আপনার স্লিপ প্যারালাইসিস আছে। সেদিনও রাতে আপনি ঘুম থেকে উঠে দেখলেন নড়তে পারছেন না। ভয় পেলেন, কিন্তু জানেন, ২ ৩ মিনিট পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
২ মিনিট গেল। তিন মিনিট গেল। ১০ মিনিট গেল। রাত ৩টা। আপনি এক চুলো নড়তে পারলেন না। কাউকে শব্দ করে ডাকতে পারলেন না। আপনি আর আপনার অমানুষিক, তীব্র আতঙ্ক একসাথে বন্দি।
ধরেন আপনার স্লিপ প্যারালাইসিস আছে। সেদিনও রাতে আপনি ঘুম থেকে উঠে দেখলেন নড়তে পারছেন না। ভয় পেলেন, কিন্তু জানেন, ২ ৩ মিনিট পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
২ মিনিট গেল। তিন মিনিট গেল। ১০ মিনিট গেল। রাত ৩টা। আপনি এক চুলো নড়তে পারলেন না। কাউকে শব্দ করে ডাকতে পারলেন না। আপনি আর আপনার অমানুষিক, তীব্র আতঙ্ক একসাথে বন্দি।
ভয়ঙ্কর একটা রাতের পর সকাল হোল। আপনি এর আগে দেখেছেন স্লিপ প্যারালাইসিস হলে একটু পর ঘুমিয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, এখনও নড়তে পারছেন না। আপনি জানেন না, গতরাতে ঘুমের মধ্যে আপনার ব্রেইন স্টেমে স্ট্রোক করেছে। আপনি locked in সিনড্রোমে আক্রান্ত। আপনি সম্ভবত আর কোনদিন একচুলও নড়তে পারবেন না। একটা কথাও বলতে পারবেন না। ভাগ্য ভাল থাকলে সামান্য চোখ পিতপিত করতে পারবেন হয়ত।
আপনার ফ্যামিলির লোকেরা হয়ত আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে। যদি উন্নত টেকনোলোজি থাকে, তাহলে আপনার ভাগ্য ভাল, ব্রেইন ইম্যাজিনিং করে ডাক্তাররা বলে দিতে পারবেন আপনি পুরোপুরি কনশাস। ব্রেইনের যে অংশটা ঐচ্ছিক পেশি নিয়ন্ত্রণ করে সেটা ড্যামেজ হয়ে গেছে, কিন্তু কর্টেক্স ঠিক আছে, আপনি সব দেখছেন, সব শুনছেন, শুধু কিছু করতে পারছেন না। আরও কিছুদিন আগে হলে এই ব্যাপারটাও ধরতে পারা যেত না। আপনার মা বুঝতেও পারতেন না সমস্ত শরীর অচল তাঁর এই ছেলেটি আসলে বেচে আছে না মরে গেছে।
মানুষের যত রকম অসুখ আছে তার মধ্যে locked in সিনড্রোমের চেয়ে ভয়াবহ অসুখ আমি চিন্তা করতে পারি না।
২।
মানুষের জানা ইতিহাসে ২৮ জনকে পাওয়া গেছে যারা অ্যান্টন-ব্যাবিন্স্কি সিনড্রোমে আক্রান্ত। এই মানুষগুলো দেখতে ভুলে গেছেন। কর্টেক্সের যে অংশ দেখার এক্সপেরিএন্সটা দেয়, সেটা তাদের নষ্ট হয়ে গেছে।
মানুষের জানা ইতিহাসে ২৮ জনকে পাওয়া গেছে যারা অ্যান্টন-ব্যাবিন্স্কি সিনড্রোমে আক্রান্ত। এই মানুষগুলো দেখতে ভুলে গেছেন। কর্টেক্সের যে অংশ দেখার এক্সপেরিএন্সটা দেয়, সেটা তাদের নষ্ট হয়ে গেছে।
এই মানুষগুলো জন্মান্ধ নয় । এরা এককালে দেখতে পেতেন। এদের চোখ , অপটিক্যাল নার্ভ সব ঠিক আছে। কিন্তু এখন এরা দেখা বলতে কি বুঝায় সেটাই ভুলে গেছেন। আরও মজার ব্যাপার হোল তাঁরা নিজেরাও জানেন না তাঁরা অন্ধ। তাঁরা হাঁটতে গেলে অন্য জিনিসের সাথে ধাক্কা খান, আশেপাশের লোকজন সন্দেহ করে তাঁরা অন্ধ, অথচ জিজ্ঞাসা করলে ডিনাই করবেন।
তাঁরা লাল কি জিনিস ভুলে গেছেন। একটা চারকোনা পতাকা বাতাসে পতপত করে উড়তে দেখতে কেমন লাগে সেটা তাঁরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না। কিন্তু পতাকা উড়তে দেখার সময়কার অন্য সব অনুভূতি, আশেপাশের লোকজনের কথা, লাল সবুজ দেখতে কত সুন্দর সব তাদের মেমরিতে আছে। কথা আর আনন্দটুকু আছে, actual লাল সবুজ হারিয়ে গেছে। হারিয়ে যে গেছে সেটা তাঁরা নিজেরাও জানেন না।
আমার মনে হয় প্রত্যেকটা মানুষই কোন না কোন দিক দিয়ে অ্যান্টন ব্যাবিন্সকি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। পায়ড়ারা ম্যাগনেটিক সেন্স বুঝতে পারে, অ্যাডার ভাইপার ইনফ্রারেড আলো দেখতে পারে। ইনফ্রারেড আলো সে কি রঙের দেখে কল্পনা করতে পারবেন?
৩।
অ্যান্টন-ব্যাবিন্স্কি সিন্ড্রোম করটিক্যাল ব্লাইন্ডনেসের জন্ম দেয়। এই কর্টেক্স হচ্ছে কনশাসনেসের কেন্দ্র। কর্টেক্সের একটা অংশ হারিয়ে গেলে আপনি দেখার অনুভূতি হারাবেন। আরেকটা হারালে ভাষা আপনার কাছে কোন অর্থ বয়ে নিয়ে আসবে না। আপনি সব শুনবেন, সব কথাই মিনিংলেস মনে হবে। আরেকটা হারালে আপনি ভালবাসা কি জিনিস ভুলে যাবেন।
অ্যান্টন-ব্যাবিন্স্কি সিন্ড্রোম করটিক্যাল ব্লাইন্ডনেসের জন্ম দেয়। এই কর্টেক্স হচ্ছে কনশাসনেসের কেন্দ্র। কর্টেক্সের একটা অংশ হারিয়ে গেলে আপনি দেখার অনুভূতি হারাবেন। আরেকটা হারালে ভাষা আপনার কাছে কোন অর্থ বয়ে নিয়ে আসবে না। আপনি সব শুনবেন, সব কথাই মিনিংলেস মনে হবে। আরেকটা হারালে আপনি ভালবাসা কি জিনিস ভুলে যাবেন।
যে অবস্থায়, আপনার পুরো কর্টেক্স সবগুলো কোষ অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবে, সে অবস্থায় আপনার কনশাসনেস সাড়া জীবনের মত হারিয়ে যাবে। আপনার হার্ট হয়ত চলতে থাকবে, কিডনিও কাজ করবে, কিন্তু আপনি কোনকিছু ফিল করবেন না। গভীর, গভীর সপ্নহীন ঘুমের সময় আপনি কিছু ফিল করেন না, কিন্তু কর্টেক্স ঠিকই থাকে, তাকে আবার জাগিয়ে তোলা যায়।
কর্টেক্সের মৃত্যু, একবার হয়ে গেলে, আর তাকে জাগিয়ে তোলা যায় না।
৪।
যে মশাটা গুনগুণ করে আপনার রক্ত খেতে আসছে সে কি ভাবছে? সে কি বুঝে এই রক্ত কত টেস্টি? মশা হলে আপনার কেমন লাগত?
যে মশাটা গুনগুণ করে আপনার রক্ত খেতে আসছে সে কি ভাবছে? সে কি বুঝে এই রক্ত কত টেস্টি? মশা হলে আপনার কেমন লাগত?
উত্তর হোল, এই মশাটা গভীর ঘুমে আছে। গভীর ঘুমের সময় আপনার বায়োলজিক্যাল মেশিনগুলো যেভাবে কাজ করে, ওই মশাও সেভাবে কাজ করে। সে একটা বায়োলজিক্যাল মেশিন, তার জন্ম হয়, সে মারাও যায়, কিন্তু কোনদিন সত্যি সত্যি বেচে থাকে না। আপনার হাতের বারি এড়ানোর জন্য সে অনেক চেষ্টা করে হয় তো, কিন্তু আসলে যখন বারিটা খায় পেইন ফিল করে না।
৫।
৮৬ বিলিয়ন নিউরনের মধ্যে মাত্র ১৬ বিলিয়ন ওই কর্টেক্সে। তারপরও ওই কর্টেক্স কনশাস, ৭০ বিলিয়নের বাকি মস্তিষ্কটুকু নয়।
৮৬ বিলিয়ন নিউরনের মধ্যে মাত্র ১৬ বিলিয়ন ওই কর্টেক্সে। তারপরও ওই কর্টেক্স কনশাস, ৭০ বিলিয়নের বাকি মস্তিষ্কটুকু নয়।
কি, এই কর্টেক্স? কি আছে এতে?
(চলবে)