বিসিএস ভাইভার জন্য যা করতে হবে এবং যা পড়তে হবে

 ৪০- তম বিসিএস ভাইভার জন্য যা করতে হবে এবং যা পড়তে হবে [ব্যক্তিগত মতামত ]

#যা করতে হবে
১. নিজের আঞ্চলিকতা পরিহার করতে হবে অর্থাৎ আপনি যা বলবেন তা যেন বই রিডিং পড়ার মতো হয়।
২. মুদ্রাদোষ এখন থেকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ অর্থাৎ হাতের আঙ্গুল নাড়ানো, পা নাড়ানো, মাথাবাঁকা করে কথা বলা, কথার পরে বুঝলেন বুঝলেন বলা ইত্যাদি।
৩. হাঁটার সময় কোন রূপ শব্দ যেন না হয় তা এখন থেকে অভ্যাস গড়ে তোলা।
৪. পারলে এখন থেকে ছেলেরা ফরমাল সু যেমন অক্সফোর্ড স্যু এবং মেয়েরা যা পায়ে পরে ভাইবা দিবেন তা পরে হাঁটার অভ্যাস করা।
৫. নিজের ঘরের গেট টিকে ভাইভা বোর্ডের দরজা মনে করে দরজা খোলা এবং ঘর শূন্য থাকা অবস্থাতেও অনুমতি নিয়ে প্রবেশের অভ্যাস গড়ে তোলা।
৬. কারো সাথে নিজেকে তর্কে জড়াবেন না এই ভেবে যে আমি তো এখন ভাইবা প্রার্থী। কেউ কোনো প্রশ্ন করলে স্বাভাবিক এবং লজিক্যালি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। যাতে করে এই অভ্যাসটি ভাইভা বোর্ডে কাজে দেয়।
৭. আপনার ডিপার্টমেন্টের রেজাল্ট যতই ভালো হোক না কেন অথবা বিসিএস রিটেন যতই ভালো দেননা কেন নিজেকে অতি পণ্ডিত ভাবা যাবেনা। কারণ পিএসসির মেম্বার স্যারেরা আপনাকে চাকরিতে সুপারিশ করতে বাধ্য নন। তাই নমনীয় আচরণ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
৮. করোনাকালীন সময়ে ভাইবায় মাস্ক পরে ভাইভা দিতে হবে। তাই এখন থেকে মাস্ক পরে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তোলা। আর যারা চশমা পরেন তাদের চশমা যেন মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ঘেমে না যায়, তার দিকে নজর দেওয়া। আর মাস্কের কালার ছেলেদের টাইয়ের সাথে ম্যাচিং করে এবং মেয়েদের কামিজ/ শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে পরিধান করা ভালো এটি বর্তমান বাজারে সহজলভ্য। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। এটাতে মার্জিত লাগে আরকি!
৯. কয়েকজন ভাইবা প্রার্থী মিলে গ্রুপ করে ডামি/ মোক ভাইবার অভ্যাস গড়ে তোলা, যা হবে পিএসসির অনুরূপ। এবং সকলে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় থাকতে হবে। কেননা খোলা মুখের থেকে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় কথা কম শোনা যায়। যা এখন থেকে অভ্যাস না করলে পিএসসিতে শ্রদ্ধেয় স্যারদের নিকট আপনি বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন।
১০. কথা বলার সময় আই কন্টাক্টটি ঠিক রাখা অর্থাৎ চোখে চোখ রেখে কথা বলার অভ্যাস করা।
১১. হোয়াইট বোর্ডে লেখার অভ্যাস তৈরি করা।
১২. আপনার কথা কতটুকু শুদ্ধ তা পরীক্ষা করার জন্য গুগল ভয়েস টাইপিং এ টাইপ করতে পারেন। নিজের কথা বলার স্টাইল সম্পর্কে নিজেই বুঝতে পারবেন।
#যা যা পড়তে হবে
১. প্রথমত এর নির্দিষ্ট কোন সিলেবাস নাই
২. বাংলাদেশের ইতিহাস অর্থাৎ ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তথ্য সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত হওয়া। এর সাথে সাথে বৃটিশ শাসনের ২০০ বছরের ইতিহাসের বেসিক বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত হওয়া। এর জন্য ইন্টারনেট, ভাইভা গাইড এবং প্রসিদ্ধ কিছু লেখকের এর বই বাজারে পাবেন।
৩. বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে একটি ভাল ধারণা রাখা। এর জন্য "বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর" বইটি হেল্পফুল হবে।
৪. নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। যেমন- প্রথম আলো,ডেইলি স্টার, ইত্তেফাক ইত্যাদি।
৫. একটি সংখ্যাতত্ত্ব বই খুব ভালো করে পড়া। যেমন আমি মাস্টারের লেখক জাহাঙ্গীর ভাইয়ের "সংখ্যা বিন্যাস " বইটি পড়েছিলাম। বাজারে অন্য প্রকাশনীরও বই পাবেন, দেখে কিনে নিবেন।
৬. সাধারণ জ্ঞানের সাম্প্রতিক একটি বই পড়া যা খুবই হেল্পফুল হবে ইনশাআল্লাহ।
৭. বঙ্গবন্ধু এবং বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বইগুলো পড়া। যেমন -আমার দেখা নয়াচীন, কারাগারের রোজনামচা, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ওরা টোকাই কেন, শেখ মুজিব আমার পিতা।
৮. মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সর্বাধিক ধারণা থাকা এর জন্য হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লেখা বই, আনিসুল হক স্যারের "মা", সেলিনা হোসেনের "একাত্তরে ঢাকা", সুফিয়া কামালের "একাত্তরের ডায়েরী " প্রভৃতি পড়তে পারেন। সাথে সাথে ইন্টারনেট থেকে বাংলাপিডিয়ার হেল্প নিতে পারেন।
৯. ক্যাডার চয়েস এর প্রথম তিন-চারটি ক্যাডার সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা নিয়ে যাওয়া। বাকিগুলোর পদসোপান এবং এর কাজ সম্পর্কে সম্যক ধারনা নিয়ে যেতে হবে। এর সাথে নিজের সাবজেক্টকে জানতেই হবে। তাতে আপনি যে ক্যাডার এইভাবে দেন না কেন।
১০.নিজ জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ এর মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা, ঐতিহাসিক ঘটনা, বিখ্যাত ব্যক্তি, কুখ্যাত ব্যক্তি প্রভৃতি সম্পর্কে অবহিত থাকা।
১১. নিজ জেলার ব্র্যান্ডিং, নামকরণের ইতিহাস, নদী- নালা, ঐতিহাসিক স্থান প্রভৃতি সম্পর্কে জেনে থাকা জরুরি।
১২. কিছু প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা। জাকির ভাইয়ের পেজে "ভাইবার ৭৭ টি কমন প্রশ্ন" দিয়ে পোস্ট করা হয়েছিল, তা ঠিক করে রাখতে পারেন।
১৩. মানচিত্র সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা।
১৪. এটিএন বাংলায় বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কিত ইউটিউবে একটি ভিডিও পাবেন যা দেখে নিতে পারেন।
১৫. বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে পুরোপুরি জানা সর্বাধিক জরুরী।।
### সর্বোপরি ভাইবা হল একটি আনপ্রেডিক্টেবল বিষয়। যার জন্য ভাগ্য অতীব জরুরি। তাই আমি মনে করি, মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজ এ পর্যন্তই....
৪০ তম বিসিএস ভাইভা প্রার্থীদের জন্য রইল শুভকামনা
মোঃ রুকুনুজ্জামান
৩৮- তম বিসিএস জেনারেল এডুকেশন ক্যাডার